রঞ্জিত
সিংহের একটি কবিতা
লোহার সিন্দুকে নীল বিষ
হরিণের মাংস আর চাক ভাঙ্গা মধু – এই ছিল আমাদের খাদ্য।
অরণ্যে অরণ্যে দিনমান,
বাঘের গায়ের গন্ধ, ঠান্ডা, স্যাঁতস্যাঁতে –
প্রায় আধমাইল লম্বা, পাঁচশো ফুট চওড়া একটা গুহা,
তাতে আমাদের রাত্রিবাস এবং সংসার।
গারো পাহাড়ের সিজু অঞ্চল।
ঘামতেলে জবজবে নিকষ কালো সোমত্ত একটা বউ ছিল।
কালো রঙের ওপর ঘন কালো ধনুকের হুল- দুই ভুরু,
অরণ্যসঙ্কুল চোখ, মণ্ডলাকার স্তনশিখা, দুশিখার মাঝে
এক সুতোও গলে না...
আমাদের ছিল মস্ত ধনুস্পট, বিষমুখ শরপুঞ্জ, একমানুষ লম্বা
বল্লম।
নিখুঁত সন্ধানে বাঘের হাঁমুখে বল্লম, হরিণের বুকে শর-
মল ও মাটির প্রাকৃতিক নিয়মে, সঙ্গে সঙ্গে, এইভাবে...
সোমেশ্বরী নদীর ঘাড়াই, লম্বালম্বি হাই ভোল্টেজ টান,
অবহেলায় মুটকিতে ফাটিয়ে জলে ঝাঁপ, স্নান,
খিলখিল – হা হা –
হো হো—
সন্তরণ মুদ্রায় রমণ, রমণে জলস্তম্ভ, পাহাড়ে ভূকম্প,
মাংস...মধু...রক্ত... ফেনপুঞ্জ...
পাহাড়ের খাঁজে।
বড় সুখের রমণ ছিল আমাদের। শুধু কারো জানা ছিল না
লোহার সিন্দুকে আছে বিষ ।
কালপুরুষ আড়ায় শাল গাছ : সে ছিল দেবতা।
দেবতার গা রক্তমাখা – বুনো ফুল, ফল, মাংস, মধুতে
আগুন জ্বালিয়ে নিশাকালে পুজো।
বাঘের চামসা গায়ে মেখে আমাদের একপাল ছেলেমেয়ে
গুহায় নিঃসাড়ে ঘুমোত।
এমনি একদিন, বউ পুজোতে,
সবেমাত্র রজোদর্শন আমারই মেয়ের যোনির নাসায়
আমি কি ওষ্ঠ দিতে গিয়েছিলাম?
তবে কেন কোথা থেকে জ্বলজ্বলে সেই অরণ্যসঙ্কুল চোখ
বড় হতে হতে ঝোড়ো মেঘ!
গারো পাহাড়ের বুনো ঝড়!
ঝড় ঘুরে গিয়ে বৃক্ষ দেবতার ক্ষিপ্ত শেকড়-ছেঁড়া পা,
ছেঁড়া পা থেকে কামজ্বরে পাহাড়ের পাথর খসিয়ে
দম্ভিল নাগ, স্তম্ভপদ-
আমার শরীরে পলকে চড়াৎ চড়াৎ শব্দ –
সিজুর জঙ্গলে হাড়ের ধূলো, রক্তের ধোঁয়া-
ভাঙা ঘটপটে সোমেশ্বরী ঘাড়াইয়ের টানে!
এই আমার গতজন্মের স্মৃতি।
একটা অস্বচ্ছ পর্দার ভেতর দিয়ে
এ রকম একটা ছবি স্বপ্নে ভেসে আসে:
কামজ্বর রক্তচোখ একটা হাতি
জলের জাগ রাখা লোহার বাতিল সিন্দুককে
ফুটবল লাথিতে সারা ঘর নাচিয়ে বেড়াচ্ছে
আর ঘর ক্রমে নীল, নীল ভয়ংকর নীল...
ধড়ফড় ঘুম ভাঙে, ঘাম মুছে বলি :
ওগো শুনছো , একটু জল দেবে...
সুন্দর শব্দ চয়নে তৈরী হয়েছে এক অণুকাব্য--
ReplyDelete