।। বাক্‌ ১২৪ ।। সঞ্জীব নিয়োগী ।।







আর তো দেওয়া যাবে না, সাধু, তোমায় এবার থেকে প্রতিবারই প্রেসক্রিপশন লাগবে আর তাতে যেন স্পষ্ট করে লেখা থাকে, অমুক তারিখ থেকে এত দিনের জন্যদেখই না, তুমি নিজে দেখ! কোন্আদ্যিকালের কাগজ পকেটে ভরে আনো, ভাঁজ খুললে ঝুরঝুরিয়ে ঝরে যাবেখন ওই দেখে আর কদ্দিন দিব, অ্যাঁ? …বুঝলে সাধু, নতুন নিয়ম এসেছে প্রতিবারই ফ্রেস প্রেসক্রিপশন লাগবে ভায়া, আর তার ফটোকপি আমাকে স্টক মিলিয়ে রেকর্ড রাখতে হবে যে!
তুমি নাকি, তার উপরে,শুনলাম, জমাচ্ছো? কী অলক্ষুনে কথা, বল দেখি! টেপি বলছিল বালিশের নিচে থেকে একগাদা পেয়েছে? জমানোর জন্য কেন নাকি? আশ্চর্য!
পুরোটা জমাই না দুলালদা; ধরো, দশটার স্ট্রিপ নিয়ে গেলাম তো, ছয়খানা খেয়ে আবার দশটা নিতে এলাম, এইরকম। তাহলে জমলো তোমার গিয়ে চার। ক্ষুদ্র প্রকল্প, সঞ্চয়। বিন্দুতে সিন্ধু, তাও বলতে পারো।
কেন, আমাকে পুলিশে দেবার ফন্দি বুঝি? হতচ্ছাড়া, বলছে আবার সঞ্চয় প্রকল্প! একটা সারদা খুলে ফেল তো দেখি শালা!
তা কেন দুলালদা, মানুষ কি দুর্দিনের জন্য সঞ্চয় করবে না? পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, নানাবিধ জীবজগৎ যদি রেইনি ডে মাথায় রেখে এগোতে পারে, এমন কী পিঁপড়েও, তাহলে আমি কেন পারব না? এসবে পুলিশ ঢুকবে কেন?
না না বাবা, আমি পারব না। তার চেয়ে বরং রোজ রাতে শোবার আগে একবার ঘুরে যাস আমার দোকান থেকে। বারোটা অব্দি তো খোলাই থাকে।
তোমার দোকান থেকে ঘুরে এলে আমার ঘুম আসবে বুঝি?
আসবে বইকি। আসতে বাধ্য। আমি নিজে হাতে তোর মুখে টুপ্‌ করে একখান বড়ি গুঁজে পিউরিফায়েড ওয়াটার সহযগে খাইয়ে দিবখন। আসবে না, ঘুম?
ইহা শ্রবণে সাধু কিছুকাল বাক্যহীন। দুলাল মিত্তিরের ‘মিত্র মেডিসিন’ এর ভাঁজে ভাঁজে সাজানো নানা কিসিমের দাওয়াইয়ের দিকে অন্যমনস্ক চেয়ে থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক, ভিটামিন, বেবি ফুড, ট্যাবলেট, লিক্যুইডের মিশ্রিত সুবাসের বর্ণে-গন্ধে বুঁদ হয়ে। সকালে ভিজিয়েছে ছোলা, বিকেলে মুড়ি দিয়ে খাবে বলে সেগুলো দেখা হয়নি খাওয়া হয়নি ওরা এখন কত ফুলে উঠেছে, নাকি জলের অভাবে পুরো ফুলতে পারেনি জলের কি অভাব রেখেছিল, বাসনটা কি ছোট হলো, ছোলাদের জন্য? জলে ভিজে ফুলে ওঠা ছোলারা ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হতে জানে জানে, সাধুও, ওদের বেড়েওঠার আদর

এছাড়াও তুলতুলে ঝগড়া জমে থাকেটেপিকে বকা-ঝকা করলে টেপি নেতিয়ে পড়ে। টুকটুকে লাল হয়ে যায়, গাল। গ্রীষ্ম হয় দেহে, রেগে গিয়ে, টেপিরই। তাতে সে গলে যেতে থাকে আর পুতুল হয়ে যায়। গিয়ে, নেতিয়ে পড়ে। তাই দেখে আর ঘুমের ওসুধ ছোঁয় না সাধু। টেপির কপালে জলপটি করে। রুমাল বার করে তার বুকের ঘাম মুছে দেয়, সাধুই।  
এই শয়তান মেয়ে, দুলালদার কাছে নালিশ করেছিস কেন রে?
এই শুনে টেপি ফুল তুলতে চলে যায়। সেখানে, ফুলের অনেক রকমফের ভাবে আর রেণু বাঁচিয়ে সাজি ভরে। তবু রেণু থেকে বাঁচতে পারেনা সব দিন। কেননা নেকদিনই রেণু বেশি থাকে। ওতে হাঁচি হয় তার। হাঁচলে অনেকবার হাঁচি  আসে আর ততবার বুক-পেট লাফিয়ে ওঠে। সেই কথা দূর থেকে দুলালদা দ্যাখে আর দোকানের হিসেবে টুকে রাখে। মাসে মাসে দিয়েও খাতার লেখা মিটমাট করতে পারে না, সাধু। তখন টেপি রাস্তা দিয়ে গেলে দুলাল ডেকে নানা কথা পাড়ে, হিসেব দেখায়। বলে, দিবিখন। তাড়া কী!
দুলাল ওষুধের মধ্যে বসে বসে ভালো লোক হয়। দয়া হয়। দ্যাখে তো টেপি, কত নাম ভরে আছে খাতায়। তবু দুলাল সব দিকে হাসে। হাসিতে লোক আরও আসে। ...বালিশের তলায় আজ এই এত্ত ট্যাবলেট পেয়েছি গো দুলালদা, কী জানি ডেট চলে গেছে নাকি। খায় না কেন। আবার দেখি নিয়ে যায়।  
রাতে ট্যাবলেট খেয়ে খুব ঘুমায়, নারে?
নাক ডাকে গো, হিহি...
খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে, নারে?
আবার কী! তোমার দোকানে তো সব আসলি ওষুদ। সাধে কি আর তোমার দোকান ছাড়া কিনবে না! একদিন বন্ধ ছিল তোমার, তাও নিল না উজ্জ্বলদার কাছে।   
এক্কেবারে সকালে ওঠে তাহলে? কটায় ওঠে? উঠে তারপর কী করে? বলছিল নাকি সোজা পায়খানায় যায়?
ভাগ! ঠেলা না দিলে কিচ্ছু করে না। কিচ্ছু না গো দুলাল দা। দাঁত মাজো রে। চা খাও রে। স্নানে যাও রে। খেতে বসো রে। অফিসে বেরোও রে।  বলব , তবে করবে।
এঃ। ভারি মুশকিল তো তোর। সব কি আর বলে করান যায় রে টেপি...
তাই ভাবো! আমি বলেই ইয়ে...
শোন, তোকে নিজের ভাবি বলেই বলছি, ওই ওসুধে কিন্তু হবে না ওর। দেখি আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলব। তুই একবার আসিস না হয় দু এক দিন বাদে। দুপুরের দিকে।



নানা কথার নানা বর্ণের ঘাস, ফুলের সাথে উঠে আসে, টেপির সাজিতে 
সাপও চলে আসে, গোপনে, কিছুটা স্বেচ্ছা-অবহেলায়, টেপির রোমশ পায়ের গোছ বেয়ে বেয়ে, অদৃশ্যমান সম্ভবত একটাই সেটা, সাপটা, নিঃসঙ্গ একটু বেচারা গোছের সাপ সাজিতেও আসে যেটা সে দেখতে পায় আর সেটাকে যখন দেখতে পায়না তখন টের পায়, টেপির গোড়ালি বেয়ে হাঁটু অব্দি যে খুঁখার রোমরাজি, তাতে শান্ত সাপটা চোখ বুজে আদুরে গাল ঘষছে  নিরীহ সাপের আদলটা বিভিন্ন রূপ ধরে হাসে থাকে, চলে যায়, আসে মিটিমিটি হাসে গোড়ালি জড়িয়ে ঘুমোয়, ঘুম ভেঙে গেলে ঊর্ধ-পানে চেয়ে থাকে, ঠিক চেয়ে থাকে, টের পায় টেপি অন্তর্জামির দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে অনুমতি চায়? …আপন মনে ফিক করে হেসে ফেলে টেপি ফুলের রেণুতে সর্বাঙ্গ সির সির করে
ভিটামিন খেতে আবার প্রেসক্রিপশন লাগে নাকি দুলালের মতো দুঁদে দাওয়াই-বেচা লোক ছোট-খাটো ব্যামোর ওসুধ এমনিই দিনরাত কত দিয়ে চলেছে। সে টেপির হাতে দুই রকমের ভিটামিন দেয়। একটা সাধুর জন্য, আরেকটা টেপির। কত দুবলা হয়ে যাচ্ছে টেপি না! অ্যাঁ? কে নাম রেখেছিল ওই হারামিটার! সাধু! না, ছাই! টেপির দিকে নজর দেয় না। শালা। বছরভর শুধু নিজের খুঁতখুতানির শেষ নাই। ঢপের একখান আদ্দিকালের কাগজ পকেটে পুরে দোকানে এসে দাঁড়িয়ে থাকবে। রোগ না ছাই, শয়তানি। দিবিখন রোজ এই ভিটামিনটা দুবেলা চায়ের সাথে চুপটি করে। আবার নিজেরটা খেতে ভুলিস না তাবলে। যা একখান পাগলি রে তুই, টেপি!  
তখন হরিবোল হরিবোল গাইতে গাইতে নগর কেত্তন আসছে দূর থেকে ক্রমে কাছে। দুলালের কথাগুলো তাই খোল-খঞ্জনির জগঝম্পে ডুবে যাচ্ছিল একে একে। টেপির গা ঘেঁষে একটা বুড়ো ভাম ওষুধ নিবার অছিলায় টেপির শুকিয়ে যাওয়া ঘামের গন্ধ শুঁকছিল। এত সব কাণ্ডে ব্যাপার গুলো আধো আধো গুলিয়ে যাওয়ায় টেপি এবার স্নানে নামল। ...
তা নামতেই পারে, তাবলে এখানে সেই সিন আসছে না। ক্যামেরা ঘুরে যায় সাধুর দিকে। টেপিকে নিয়ে, ক্যামেরা, একটু যে ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে পারত না তা কিন্তু নয়। তবে কম বাজেটে বেশি ফুটেজ বরবাদ করাটা যুক্তিতে টেকে না। অন্তত, শুরুতে তে নয়ই। শেষে হাতে কিছু উদ্বৃত্ত থাকলে দেখা যাবে। ... তাহলে ক্যামেরা সাধুর দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছি, এই তো?

সাধু একটা স্বপ্ন দেখুক। ...
     
আমি বললম আর তোমার বউ আমার প্রেমে পড়ে যাবে ফটাম করে নাকি?
না, ফটাম করে পড়বে না তবে কীনা, মানুষের শরীর কিনাশান্তির  খোঁজে হিমালয়েও যেতে পারে দুলালদা!
কে এসমস্ত কুবুদ্ধি দিল তোমার মাথায় গো সাধু? মেয়েটা কত করসত করে তোমাকে বাঁচাতে চাচ্ছে আর তুমি কিনা সন্দেহ করছ ওই নিরীহ টেপিকে? ছিঃ সাধু, ছিঃ!
কেন করব না দুলাল দা। মানুষ না সে? ওর শরীর নাই? মন নাই?
ভাগ ভাগ ভাগ হিঁয়াসে, হারামি! আর আসিস না আমার দোকানে, ভাগ!
না গো, শোনো না। বলব যে। বলছি কী, আমি নিজেই তো কত বেটাছেলের বউকে শুইয়েছি সাথে, ওরা পারল আর আমার বউ পারবে না? শুধু পরের বউরা পারে?
ভাগ না রে শয়তান এখন। গাঁহাক আছে, পালা বলছি!
বলব যে। শোনো না দুলালদা। রাগছ কেন বাঁড়া। বলছি তো কানে কানে, কেউ টেরটিও পাবে না। শুধু আমি আর তুমি। রহস্যময়, থাকবে, মরা অব্দি। কথা।
আচ্ছা, বল। এত শখ যখন, বলেই শান্তি পাও।
বলছিলাম কী, কটা টাকা হবে...? একটা সাড়ে সাতশো এমএল ব্ল্যাক লেবেল কিনব মাইরি!
তুমি কি আমাকেও সন্দেহ কর নাকি, সাধু?
করব না? করি তো। তালি কি এক হাতে বাজাচ্ছে নাকি, টেপি!
আমাকে? সন্দেহ? ছিঃ সাধু, ছিঃ!!
থামো তো, সন্দেহ ফন্দেহ কি জপছ তখন থেকে। ভাল্লাগছে না। আমি এক পেগের বেশি মদ খাই না
তা বেশ
কেন খাই না জিজ্ঞাসা করবে না?
তাতে আমার বাপের কী বে! অ্যাঁ? অনেকক্ষণ সহ্য করছি তোমাকে সাধু!  
তুমি খুব হিংসুটে মাইরি
মোটেও না আমি কাউকে হিংসে করি না
তাহলে শুনছ না যে বড় এই তো এক তুমি আছ, যার কাছে খানিক মন খুলে গপ্পো করি  টেপি শালি তো আর পাশে বসতেই চায় না।  
তোর ওই বানানো গপ্পো মেয়েছেলেতে শুনবে কেন রে? কাজ নাই? মর্দানি তো সব শালা মদে আর ঘুমের বড়িতে ডুবিয়েছো... তোর ফাঁদানো গপ্পে মেয়েছেলের শান্তি হবে নাকি!  
বুকে ঘা দেওয়া ছাড়া কথা কইতে জান না দুলালদা তুমি, না?  
হক কথায় আবার ইয়ে কী, বল? ডাক্তার দেখা, এখনও ঠিক হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি...
তুমিই তো বড় একখান ডাক্তার, গুরু, অ্যাঁ? হাঃ হাঃ, ছাড়ো না মাইরি কটা টাকা, চলে যাই।
   


আগে একটু ইঁদুরকে খাইয়ে দেখতে পারে কদিন। ভিটামিন না বিষ। বড় বড় বিজ্ঞানীরা ইঁদুর, গিনিপিগ এইসব নিয়ে আগে টেস্ট করে। এদের উপর। এই  কথা ভাবতে ভাবতে একটু ঝিমুনি আসতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই নাটকীয় ভাবে দরজায় বেল। খুলে দেখি সোনা মনা আমার খ্যাপাটা, সাধু!
ও গো, ও সোনা, তোমার মুখটা ইঁদুরের মতো হয়ে গেল কখন গো? বলো না গো মনা?
সাধু বলে, ওরে শালি, তুই জানিস কি, আধ ঘন্টা আগে আমি হারবাল প্রোডাক্ট গরম দুধের সাথে সেবন করে এসেছি। লোহা হার মানবে এখন, জানিস কি তুই...?
বলতে বলতে সাধু আমাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে চেয়ারটা ঠেলে দেওয়ালের সাথে ঠেকিয়ে দিয়ে দুহাতে আমার দুই পা তুলে নিজের কোমড়ে পেঁচিয়ে ঝুকেঁ পড়ে তার ছুঁচলো ইঁদুর-মুখো মুখ দিয়ে আমার নাভি থেকে শুঁকতে শুঁকতে সেই শোঁকা উপরের দিকে না নিয়ে গিয়ে তার মাথার চুল ধরে যত টানি তত নিচে নামায় শোঁকা তারপর কী একটা দিয়ে যেন নিরাবরণ দুই জাঙ্গের সন্ধি-ঘনিষ্ঠ আশেপাশে ছ্যাঁকা দিতে দিতে আমার দুই কাঁধ ধরে ভয়ানক খুনি চোখাচোখি সেরে ফেলে নিজের দিকে টেনে নিতে নিতে আর লালা আর পাশবিক ঘামে দুই বুক পিছল করে দিয়েই চুলের মুঠি ধরে গলা আর গালে হাঙরের দাঁতে ফালাফালা বহু প্রাচীন সাধু হয়ে ফিরে এসে ফিরে এসে ফিরে এসে আমাকে আঠোঁটযোনি ভিজে যেতে দিয়ে তার ডান হাতের তর্জনি দিয়ে প্রবেশ পথের সুগমতা পরীক্ষা করে পরীক্ষা করে পরীক্ষা করে করে করে করে করে করে করে করে গনগনে উত্তপ্ত মাংসল অনমনীয় সাধু ঢুকে যেতে যেতে কানের কাছে পুরু ঠোঁট এনে ফিসফিস জিজ্ঞাসা করে,
দুলালদা তোকে কেন মেরে ফেলতে চায়, টেপি?
আমাকে? আমি তো ভাবলামচোখ বুজে, অস্ফুটে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমবেশ-সাধনে নিমগ্ন টেপি আধো আধো বলে এই কথা
কী ভাবলি তুই? বল, কী? তবে কি আমাকে মারতে চায় দুলালদা!
নাহ্যাঁআসলে
আরে আমাকে মারলে অত টাকা ওর দোকানে ধার আছে যে, তা শোধ দেবে কে শুনি? আঃ টেপি পা তুলে রাখ পা তুলে রাখ
না গো, বলছি কি, আমার পেটেরটাকে শেষ করে দেবার ফন্দি আঁটছে নাতো আবার, কী সব ছাই ভিটামিনের নামে?
পেটে? কী হল তোর পেটে টেপি? কবে?
দু মাস হতে চললো গোউঃ আস্তে গো, বলছিলাম কি, মাসিক বন্ধ আছে যে
আরে ভাগ! খেপি মেয়ে, চুয়াল্লিশ বছর বয়স হলো তোর, না? এমনিতেই বন্ধ হয়ে গেছে দেখ গিয়েআর হবে না এত বছর বিয়ে হলো, পেট সেই মুঠোতে ধরাই থেকে গেল, আর এখন রুপকথা শোনাস, খেপি! ছাড় তো
তবু যা বলো, আগে ইঁদুরকে খাইয়ে দেখব, কেমন?
ইঁদুর মারা বিষ এনেছিস নাকি দুলাল মাদারচোদের কাছ থেকে?
না গো, ওষুধ এনে রেখে দিয়েছিলাম, পরে দেখি কিনা, সমস্ত বশীকরণের ফুল হয়ে গেছে
জানতাম। ও ব্যাটার আর মুরোদ কী। একটু এগিয়ে আয় না বাবা...
চেয়ারে কী সুখ পাও, ধুর! খারাপ ছবি দেখে দেখে এসব শিখেছ, না? চলো বিছানায় বাকিটা করি, সোনা আমার, ইঁদুর মুখো পাগলাটা!




অনেক অনেক বালি রাখা আছে নদীর এদিকে। কে রেখেছে সাধু জানে না। এসব কি ভগবান রাখে? ভগবান তো আছেই। সেই রাখে সব। শালা কত খেল জানে, অ্যাঁ? গাছগুলোকে যেখানে সেখানে রেখেছে, উপরে আকাশ রেখেছে। ওই অস্ত যাছে সুজ্জি মামা, হায় ভগবান। সাধুর মনে একরাশ হাহাকার হলো, কোথা থেকে যেন এত হুহু কান্না আর মনখারাপ ঢুকে গেল ভেতরে। বুকে জ্বালা হয়। আজ একটার বদলে দুখানা ট্যাবলেট খেয়ে দেখবে। ভগবান তো আছেই, কত ট্যাবলেট দিয়েছে সাধুকে...কে বলেছে, নেই!
একটু একটু হাঁটে সাধু, নদী-পাড় ধরে, বালি পায়ে। বালিতে পা মেপে মেপে। পকেটের কাগজটা আজ বালিতে ফেলে দিবে। নদীতেও ভাসিয়ে দিতে পারে। দুলালদা তো জেনে গেছে, ওটা কোনও ডাক্তারের লেখা নয়। আসলে, কাগজটা, প্রেসক্রিপশনই নয়। কত বছর আগে একটা সুইসাইড নোট লিখেছিল, পকেটে নিয়ে মরে যাবে বলে। সেটা দেখে, সত্যি বলতে কী, না-দেখেই, দুলাল তাকে ট্যাবলেট দেয়।
পদক্ষেপ গুণে গুণে বালিতে হাঁটে। হেঁটে যায়, আবার গুণে গুণে ফিরে আসে। ঠিক সেইখানে, যেখানে বালিতে আধ-জাগা একটা বিয়ারের ক্যান পড়ে আছে। ওটাকে ‘চিহ্ন’ মানে সাধু। ওইখানে ফিরে আসতে হবে তাকে। ওটা তার হারিয়ে না যাবার অবধারিত লাইটহাউস হয়ে থাকে। সে ফিরে না এলে অফিসে যাবে কীভাবে। কীভাবে কথা বলবে আর হাসবে ততক্ষণ, যতক্ষণ না টেপি ফিরে আসে তেপান্তর থেকে?
দূরে নদীর জল দেখা যায়, সেখানে এক আধটা নৌকো! উরিব্বাবা, আজও নৌকো চলে, ভগবান! কারা যায়, কার আসে, আজও, ভগবান? শালা এতকিছু তুই বানালি রে!
টেপি কি ব্ল্যাকমেল করেছে দুলালকে, ভগবান?
হ্যাঁ রে বোকাচোদা ছেলে, করছে তো!
হকচকিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে, দুলাল মিত্তির দাঁড়িয়ে! দুলাল আরও বলে, তুমি কি জান না সে কথা, ন্যাকা চিত্তির ব্যাটাছেলে!
কই, জানি না তো? মাইরি বলছি দাদা...কিন্তু তুমি এখন এখানে কোথা থেকে এলে দুলালদা? হাগতে এসেছ নাকি নদীর ধারে?
না রে শালা, তকে পুঁততে এসেছি এই বালিতে! ওই দিকে একমানুষ গর্ত করে রেখেছি, চল... বেঁচে যাবি। এমন ভাবে বালি চাপা দিয়ে দিবখন, পুলিশে বাপও টের পাবে না... পকেটে কাগজটা আছে না? ব্যাটাচ্ছেলে!
তুমি কি ভগবান? দুলাল সেজে এসেছ এখানে? অ্যাঁ?
দুলাল মিত্তিরকে ভগবানের ভয় দেখাস না হারামি, টেপি কোথায় বল!
জানি না তো... জাস্ট জানি না, দ্যাটস্‌ অল!
টেপি আজ চার দিন আমার দোকানে আসেনি। এখন ঘরে গিয়েও পেলাম না... শেষ করে দিব বলে দিচ্ছি সাধু, আমাকে চিনিস না!
কে টেপি? ভুল করছ দুলালদা... টেপি আমার কেউ নয়...
কেউ নয়? ...হ্যাঁ ঠিক আছে, তোর কেউ নয়, তোর কাছে নাহয় রাখতেই দিয়েছিলাম টেপিকে। বল কোথায় গেল সে?
ফেরত চাচ্ছ এতদিনে? লোকলজ্জা কি শেষ করে এসেছ এবার?
খুন করে ফেলব সাধু, চিনিস তো আমাকে ভালোভাবে। শেয়ালে ছিঁড়ে খাবে সারা রাতে, সোজা কথা বল!
এত দিনে ঘরে তুলবে নাকি টেপিকে? হাসালে যে...
বলবি না তবে? তাই তো?
ওই দেখ, দূরে দেখ, ওই নৌকোয় চেপে সে তো চলে গেল। আর আসবে না বলে গেছে।
কাব্যি মারাস না সাধু। ঝাঁট জ্বলে যায়!

তখন সাধু করল কী, দুলালের কব্জি বজ্রমুঠিতে চেপে, হিড়হিড় করে টানতে টানতে বড় রাস্তায় নিয়ে আসে। তারপর আরও যা করে, সেখান থেকে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে ‘মিত্র মেডিসিন’ এর সামনে এসে দুলালকে নিয়ে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে পড়ে। দুলালের ওষুধের দকানের দিকে তর্জনি উঁচিয়ে  দুলালকে ইশারায় দেখতে বলে। ...
দুলাল দেখে, সেখানে, দুলালের বসার চেয়ারে বসে আছে টেপি। কত দিনের অভ্যাসে যেন, হাসি মুখে উপচে পড়া ভিড় সামলাচ্ছে। তিন জন কর্মচারি টেপির নির্দেশে ওষুধ বের করছে, কাউন্টারে এনে রাখছে। আর টেপি সেই সব ওষুধ প্রেসক্রিপশন দেখে মিলিয়ে মিলিয়ে গ্রাহকদের বুঝিয়ে দিচ্ছে।   






4 comments:

  1. অনবদ্য গল্প!

    ReplyDelete
  2. ভাল লাগল, আরও গল্প পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

    ReplyDelete
  3. অনবদ্য। সাংঘাতিক জীবনের গল্প।

    ReplyDelete
  4. অনবদ্য। সাংঘাতিক জীবনের গল্প।

    ReplyDelete