।। বাক্‌ ১২৪ ।। আগামিকাল এইসব লিখেছিলাম ।। রিপন হালদার ।।









পূর্ব কথা

     এইমাত্র দেখলাম একটা বাইক সুতীব্র বেগে সামনে দিয়ে ছুটে চলে গেল। মনেহল আর একটু জোরে চললে আমি হয়ত ওটাকে দেখতেই পেতাম না। তাহলে কি বাইকটি আমার সামনে দিয়ে যেত না? অবশ্যই যেত। আমার দেখা বা না দেখাকে পরোয়া না করেই। আবার চার বছর ধরে সমীর নামে যে ছেলেটিকে চিনতাম, সেদিন ওর অকাল মৃত্যুর পর জানলাম ওর নাম ছিল সমীরণ! চার বছর ধরে সমীরণ আমার কাছে সমীর হয়ে বেঁচে ছিল! তাহলে আমার কাছে সমীর আর সমীরণ কি আলাদা ব্যক্তি?
    এই পৃথিবীর মধ্যেই কি তবে রয়েছে আরেকটা সমান্তরাল পৃথিবী? তাহলে  সত্য কোনটা? কোনটা বা মিথ্যা? বাস্তব কী? অবাস্তবতা কাকে বলে! বিজ্ঞান এর একরকম উত্তর দিয়েছে। দর্শন দিয়েছে আরেক রকম। এবার দেখা যাক  সাহিত্য কী বলে! কীভাবে বলে!
   তো এই দেখা না দেখা, থাকা না থাকা, তথাকথিত বাস্তব অবাস্তবের সীমা গন্ডী পারাপার করে চলবে এই গল্প। প্রধান চরিত্র চারটি- ‘শেলি’, ‘ও’, ‘মৃত্যুঞ্জয় স্যার’ আর ‘আমি’ গল্পের নামকরণ বিষয়ে ঋণী মারাঠী সাহিত্যিক বাল ফোন্ডকের কাছে। তাহলে শুরু করা যাক! সহৃদয় আগ্রহী আর ধৈর্যশীল পাঠককে নিমন্ত্রণ এই অদ্ভুত জগতে।




.

আপনা মাঁসে হরিণা বৈরী
 

    নার্সিং হোমের সামনে এমন একটা গাছের অস্তিত্ব থাকতে পারে লোকটি ভাবতে পারেন নি লাল হলুদ ফুল আর কচি কচি সবুজ পাতার মিশ্রণ জায়গাটার হাওয়াকেও যেন রঙিন করে তুলেছে নাহলে নার্সিং হোমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সুসজ্জিত পোশাকের ফ্যাকাশে মুখগুলোকে আরো বিষণ্ণ দেখাত
    ষাটোর্ধ এই লোকটি এখন অন্য কিছু চিন্তা করছেন ভিতর থেকে কী সংবাদ আসেতাই ভয়ে ভয়ে আছেন পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে একবার সময় দেখে নিলেন বারোটা দশ সেই সকাল আটটায় এখানে এসেছেন ফর্ম ফিলাপ, টাকা জমা মিলিয়ে ঘণ্টা খানেক পার ওদিকে ডাক্তারও তখন আসেন নি তিনি আসলেন দশটার পর       
    ঘন্টা দুই আরো পার হয়ে গেল এখনও কোন খবর নেই অথচ ডাক্তার বলেছিলেন ম্যাক্সিমাম এক ঘণ্টার ব্যাপার তারপরই বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে লোকটি উদ্বিগ্ন কারণ এইসব ব্যাপার তার পরিবার তথা বংশে এই প্রথম
    কিছুক্ষণ পর পকেটে রিং টোন বেজে ওঠে লোকটি কল রিসিভ করেন
    -‘হয়ে গেছে? বাহ! বেরিয়ে এসো বাইরে তাড়াতাড়ি কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে আমি দাঁড়িয়ে আছি
    তারপর ড্রাইভারকে ফোন করে পিছন ফিরতেই লোকটি দেখেন একটা সাদা প্রাইভেট কার হুইল চেয়ারে বসা অবস্থায় এক যুবকএক তরুণী তাকে সম্ভবত গাড়িতে ওঠানোর চেষ্টা করছে। প্যান্টের বাঁ পকেটে ছোট্ট কালো মোবাইলটা গড়িয়ে দিয়ে লোকটি হুইল চেয়ারটার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন
    ইতিমধ্যে লোকটির স্ত্রী তাঁর মেয়েকে ধরে ধীর পায়ে নার্সিং হোম থেকে বেরিয়ে এসেছে।
    গাড়িতে ওঠার পরও হুইল চেয়ারের যুবকটি এই তিন জনের থেকে চোখ সরায় নি।
    একই পৃথিবীর মধ্যে থাকলেও সম্পূর্ণ আলাদা দুই জগতের এই প্রথম দেখা। একটু তো অবাক হবেই! 


    ব্যান্ডেল শহর থেকে বাড়িটা প্রায় কুড়ি কিলোমিটার পশ্চিমে ভিতর দিকে চাষের জমির পাশে রঙিন দোতলা বাড়ি
    দিন সাতেক পর ঐ লোকটিকে খুব ব্যস্ত দেখা যায়। কিছু গোছগাছ করছেন। বড় একটা টুরিস্ট ব্যাগে তাড়াহুড়ো করে কিছু ঢোকাচ্ছেন মনেহল। মাঝে একবার তাঁর স্ত্রী এসে মৃদুস্বরে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে ব্যাগ গোছানোয় কোন প্রভাব পড়ে না। স্ত্রীকে ভয়ঙ্কর একটা ধমক দিয়ে তিনি মেয়েকে তৈরী করতে আদেশ দেন। সঙ্গে যোগ করেন।
    -‘লোকে যদি কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে বলবে চাকরি নিয়ে অন্য রাজ্যে চলে গেছে। তাও বিশ্বাস না করলে বলবে দীঘায় ঘুরতে গিয়ে চোরা বালিতে ডুবে মরে গেছে।‘
    চোখের জল মুছতে মুছতে তাঁর স্ত্রী পাশের ঘরে গিয়ে মেয়েকে বোঝাতে থাকেন।
    -‘আমার পক্ষে সম্ভব না তোর বাবাকে বোঝানো।‘
মেয়ে নিরুত্তর।  
    -‘তুই এবার তোর পথ বেছে নে! কলেজ শেষ। বোধ বুদ্ধি আছে। কিছু একটা ঠিক জোগার করে নিতে পারবি। তবে হ্যাঁ। এই বাড়িতে তোর আর জায়গা হবে বলে মনেহয় না’।
    অস্ফুটভাবে মেয়েটি একবার মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকায়। তার মা এটাকে প্রশ্ন ভেবে বলেন।
    -‘আমি কে এই বাড়ির!’
    মেয়েটি কিছু বলে না। সে বিগত মাস খানেক ধরেই বুঝতে পারছিল যে, এই বাড়ির দরজা ওর জন্য চিরতরে বন্ধ হতে চলেছে। ওর বাবার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তর্ক করার সাহস ওদের কেন এই বংশে কারোরই নেই।
    তারপর একটা প্ল্যাস্টিকের প্যাকেট এনে মা মেয়ের হাতে ধরিয়ে দেয়। –‘রাখ এটা!’
    -‘কী আছে এতে?’
    -‘টাকা। লাগবে। রেখে দে!’
    -‘প্রয়োজন নেই। আছে আমার কাছে।‘
    -‘তাও রাখ। রাস্তায় লাগবে।‘
    -‘বললাম তো লাগবেনা!’ ঝাঁঝিয়ে ওঠে মেয়ে।

    বসা অবস্থা থেকে হঠাৎ চিত হয়ে শুয়ে পড়ল মেয়েটি। খুব দুর্বল আর অসহায় লাগছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কা। ভিতরটা যেন আকাশের মত ফাঁকা হয়ে গেছে।
    সেই ছোট্ট বয়স থেকে এই পরিচিত ঘর, বিছানা, বালিশ... তার উপর মাথার চাপে ঢালু হয়ে যাওয়া গর্ত। তাতে দামী শ্যাম্পুর গন্ধ। ও চলে যাবার পর এই ঘরের কোন আনাচে কানাচে হয়ত ওর মাথার দুই এক গাছি চুলও পড়ে থাকবে না। সব অস্তিত্ব মুছে ফেলা হবে! কেউ হয়ত লক্ষ্য করবে না তবু অবশ্যই থেকে যাবে ওর কিছু পায়ের বা হাতের ছাপ এই বাড়ির মেঝে আর জিনিস পত্র জুড়ে।  
    কিছুক্ষণ পর মেয়েটি উঠে দাঁড়াল। দেখে নিল মোবাইলে চার্জ ফুল হলো কিনা। তারপর বাথরুমে গিয়ে পোশাক খোলার পর পেটের নিচে নাভি ছাড়িয়ে আরো নিচের দিকে এখনো একটু ব্যথা অনুভব করল। বাঁ হাতটা একবার ছোঁয়াল ওখানে। তারপর অল্প চাপ দিল। এখনো ব্যথা আছে। বসে পড়ল কোমোডের উপর।
    গত সপ্তাহ খানেক ধরে ডাক্তারের পরামর্শে ও ওর অভ্যস্ত জিন্স টপ ছেড়ে চুড়িদার পরেছিল। আজ আবার পরে নিল ওর সবচেয়ে প্রিয় নীল জিন্স আর মেরুন টপওর বাবা কখনো পোশাক পরিচ্ছদ বিষয়ে কোন আপত্তি করেন নি উনি চাইতেন তাঁর মেয়ে ছেলেদের মতই স্বাধীনতা ভোগ করুক কখনো কোন বিষয়ে বাধা দেন নি সেই স্নেহপ্রবন মানুষটি আজ তাঁর একমাত্র আদুরে মেয়েকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার মত একটা কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। যাকে বলে ত্যাজ্য কন্যা।
    মেয়েটি যদিও আগেই বুঝেছিল যে, এতসবের পরে ওর পক্ষে আর এই বাড়িতে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু ও কোথায় যাবে এই বিষয়ে কিছুই ঠিক করে রাখেনি। কোনো বান্ধবীর বাড়ি গিয়ে আপাতত ওঠা যায়। কিন্তু সেখানে আর কদিন! তাছাড়া তাদের বাবা মা আপত্তি করতে পারে। নিজের বাবাই যখন মানতে পারছে না, অন্যদের থেকে কী আশা করা যায়!  
    শেষ পর্যন্ত বাকি থাকে একজনই। সে কী বলে দেখা যাক।
    সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হতেই বাড়ির সামনে একটা মারুতি ভ্যান এসে হাজির। মেয়েটি বেরিয়ে আসে ব্যাগ সমেত। তার সাথে কাউকে আসতে দেখা যায় না। দরজার সামনে ওর মা দাঁড়ানো। আঁচলে চোখ মুছছে। বাবাকে দেখা যাচ্ছে না।
    বাড়ির আরেক ক্ষুদ্র সদস্য মিমি এইমাত্র কোথা থেকে যেন ঘুরে এসে উঠোনে সিমেন্টের চাতালে এসে দাঁড়িয়েছে। সাদা রঙের পশম সমৃদ্ধ দেহটা এই অন্ধকারে একমাত্র উজ্জ্বল বস্তু বলে মনে হচ্ছে। দুই এক পলক তাকাল সে চলে যাওয়া মালকিনের দিকে। তারপর লেজ ঘুরিয়ে কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল।

    গাড়ির ড্রাইভার জিজ্ঞাসা করল - ‘স্টেশনে যাবো তো?’
    শেলি নিরুত্তর। অন্যমনস্ক। আরেকবার প্রশ্ন করায় সম্বিত ফেরে- ‘স্টেশনে। হ্যাঁ। স্টেশনে চলো!’
    সন্ধ্যা পৌনে সাতটা নাগাদ শেলি ব্যান্ডেল স্টেশনে পৌছায়। এক নং প্লাটফর্মের সামনে ওকে নামিয়ে দিয়ে একগাদা ধুলো উড়িয়ে মারুতি ফিরে চলে যায়। ভাড়াও চাইল না। সম্ভবত ওর বাবার বলা আছে।     
    মার্চের এই মনোরম সন্ধ্যায় শেলি বিভ্রান্ত। যাকে বলে কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
    সামনে অজস্র রেল লাইন। আকাবাঁকা সমান্তরাল। আলো পড়ে চকচক করছে। দূর পাল্লার একটা গাড়ি ধীর গতিতে প্রবেশ করছে স্টেশনে মাইকে অজস্র ঘোষণা থেকে থেকে বেজে যাচ্ছে। শেলি ভেবে পাচ্ছে না কিছু। এখন ও কী করবে! কোথায় যাবে!
    দূর পাল্লার কোন ট্রেনে উঠে পড়বে! রিস্ক হয়ে যাবে না! তারপর নামবে কোথায়? কোথায় থাকবে? খাবে কী? ব্যাঙ্কে যা আছে খাওয়া আর হোটেল ভাড়া মিলিয়ে বড় জোর পনেরো দিন চলবেতাও ভাড়া এক হাজার টাকার মধ্যে হলে।
    শেলি সিদ্ধান্ত নেয় কোলকাতা যাবে। আপাতত কোন সস্তার লজ বা হোটেলে গিয়ে উঠবে। তারপর দেখা যাবে। কলেজে উঠেই টিউশন শুরু করেছিল। এই তিন বছরে বেশ কিছু টাকা জমেছে। এবার তা কাজে লাগবে। সাবজেক্ট হিসেবে বায়োলজির ডিমান্ড খারাপ না।
    অন্যদের মত ও যদি মোবাইল প্রসাধন আর ব্রান্ডেড পোশাক কিনে টাকা উড়িয়ে দিত তবে এখন ওকে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে হত। অবশ্য এখান থেকে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে যেতে হলেও ওকে বাস বা ট্রেনে করে যেতে হত। তাতেও টাকা লাগত।
    শিয়ালদার টিকিট কাটার পর নির্দিষ্ট স্টেশনে গিয়ে সিমেন্টের চেয়ারে বসে শেলি বাড়ির মোবাইল নাম্বারগুলো ব্লক লিস্টে ফেলে দিল। ট্রেনের এখনো দেখা নেই। ঘোষণা হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। পাশের দোকান থেকে কিনে নিল পাউরুটি, কলা আর অবশ্যই ওর প্রিয় ড্রিঙ্ক থামস আপের ছশ এম.এলের একটা বোতল ব্যাগে ঢোকানোর আগে শেলি বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়েছিল প্ল্যাস্টিকের বোতলের উপর ছাপা লাল থামস আপ চিহ্নটার দিকে। 

    হঠাত একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল শেলির। সেদিন নার্সিং হোম থকে বেরনোর সময় হুইল চেয়ারে বসে একজন ওর দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে ছিল। আশ্চর্যের বিষয় হলো লোকটিকে দেখতে অবিকল ওর মৃত্যঞ্জয় স্যারের মত। লোকটির বয়স কয়েক বছর বেশি হলে স্যারের সাথে ওকে পালটানো যেত। সেই মৃত্যুঞ্জয় স্যার, শেলির এই বর্তমান অবস্থার জন্য যে অর্ধেক অংশে দায়ী!
     আচ্ছা, স্যারকে একবার ফোন করলে কেমন হয়! শেলি জানে কোন লাভ হবেনা। নার্সিং হোমের ব্যাপারটার পর থেকে একবারও স্যার ওর সাথে যোগাযোগ করেনি। তবু একবার জানাতে ইচ্ছা করছে শেলির বর্তমান অবস্থাটা।            
      দ্বিধা নিয়েই ফোন করল। কোনো শব্দ নেই। আবার প্রেস করল কল বাটন। এবারও শব্দহীন। তিনবারের বার ফোন বলছে ‘আনরিচেবল ওর সুইচড অফ।‘ হয়ত নাম্বার পালটে ফেলেছে অথবা নেটওয়ার্ক প্রবলেম।
     একটা অপশব্দ উচ্চারণ করে মোবাইলটা হ্যান্ড ব্যাগে রেখে দিল শেলি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো স্যারের উপর কিছুতেই ওর ভিতর রাগ তৈরি হচ্ছেনা!  


      রাত সাড়ে আটটা নাগাদ শেলি শিয়ালদহ পৌছায়। খবর নিয়ে জানল পাশেই কয়েকটা লজ রয়েছেপ্রথমটায় ঢুকেই সমস্যা। ম্যানেজারের বিরক্তিকর সব প্রশ্ন- “কেন এসেছেন?, কোথায় যাবেন?, কী কাজ করেন?” ‘কাজ’ শব্দটায় একটু অনাবশ্যক জোর দিয়ে উচ্চারণ করল। তারপর কেশবিরল বয়স্ক মাথাটা  চোখ উপরে তুলে শেলির দিকে তাকাতেই মনেহয় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক।
    চেয়ারে বসা অবস্থায় কারো পক্ষে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শেলির মুখের দিকে তাকাতে হলে তার দৃষ্টিকে এক জোড়া মোহময় উন্নত শৃঙ্গে বাধা পেতেই হবে। তারপর অনেক কষ্টে চোখকে বুঝিয়ে বশে এনে উপত্যকার ঢালু পথে চালিত করে মুখের খোঁজ করতে করতে অনেক দেরি হয়ে যায়।
    বেরিয়ে এল শেলি। দ্বিতীয় লজে রুম পাওয়া গেল। অধিক প্রশ্ন ছাড়াই। ছয়শ টাকা প্রতিদিন। আধার কার্ড, আই কার্ড দেখিয়ে প্রথম দিনের ভাড়া মিটিয়ে শেলি নিজের রুমে প্রবেশ করল। রুম মোটামুটি পরিষ্কার। তবে বেশ ছোট। একজনের পক্ষে অবশ্য অসুবিধা হবার কথা নয়।
    শেলি স্নান করে নিল। তারপর টি-শার্ট আর বারমুডা পরে সঙ্গে আনা স্লাইজড পাউরুটি, কলা আর কোল্ড ড্রিঙ্কস সহযোগে ডিনার সারছে। সামনে চলছে টিভিতে হাবিজাবি অনুষ্ঠান। চ্যানেল পালটে বেশ কিছুক্ষণ এম-টিভি দেখল। আনপ্লাগড নামের এই অনুষ্ঠানটা বেশ লাগে ওর।
    শেলির মনেহচ্ছে ও কোন ট্যুরে এসেছে। দিব্যি ছুটির মেজাজ। কোন ধরণের মন খারাপ বা বিষণ্ণতা বা ভয় ওকে একদমই ছুঁয়ে যাচ্ছে না। অথচ এরকম তো হওয়ার কথা না!    
    দেয়াল ঘড়িতে রাত তখন প্রায় এগারোটা। মোবাইল চার্জে বসালো শেলি দেখল  মায়ের একগাদা কল মিসড হয়ে আছে ব্লক লিস্টে রাখার কারণে। কলব্যাক করার প্রয়োজন বোধ করল না। না, ওর সেই স্যারেরও কোন কল নেই। বস্তুত পক্ষে স্যারের সঙ্গে সম্পর্কটা জানাজানি হবার পর থেকে কারোরই কোন ফোন আসেনি ওর কাছেসবাই কি ওকেও ব্লক লিস্টে ফেলে দিল নাকি! কত বন্ধু বান্ধব, আড্ডা, একসঙ্গে কত সময় কাটানো, সবাই সব ভুলে গেলো! শুধু একটা অসম সম্পর্কের জন্য! এবং সেটা সমাজের চোখে অবৈধ বলে!
    ঘুম আসছে না। টিভিটা অফ করে শুয়ে আছে শেলিভাবছে, এ কোন পথে পা বাড়াল সে! কেমন হবে ওর আগামী অনিশ্চিত দিনগুলো। এখানে আর কতদিন থাকা যায়! এরপর কোথায় যাবে সে! কী করবে! কোলকাতায় ওর পরিচিত কেউ নেই। থাকলেও তাদের কাছে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠেনা। তাছাড়া এখানে ওকে কী কী সম্ভাব্য বিপদের মধ্যে পড়তে হতে পার তার তালিকা ও মনে মনে তৈরি করে ফেলে। আর সেই বিপদগুলো থেকে ও কীভাবে পরিত্রাণ পেতে পারে তারও একটা খসড়া তৈরি করে ফেলল। সর্বোপরি টাকা। ওর কাছে যা আছে তা দিয়ে লজ ভাড়া আর খাওয়া খরচ মিলিয়ে দিন পনেরো-ষোল চলবেতারপর!    
    রাত ঠিক বারোটার সময় শেলির মোবাইলে রিং টোন বেজে ওঠে। তন্দ্রা মত এসেছিল। বিছানা থেকে উঠে চার্জের কেবল থেকে মোবাইল খুলে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেঅচেনা নাম্বার। এবং ডিজিটগুলোও অদ্ভুত- 1111100000. এরকম কখনো ফোন নাম্বার হয় নাকি!
    শেলির মন দ্বিধাবিভক্ত। কলটা রিসিভ করবে কি করবে না, ভাবছে

(ক্রমশ)
   




4 comments:

  1. নতুন সাহিত্য বিহঙ্গে লেখা আপনার অকপট আধুনিক সাহিত্যের রংতুলি ।

    ReplyDelete
  2. Dada, besh agroho jonmalo, opekkhya korchi porer drishyer..

    ReplyDelete